ক্যামেরা – এমন এক অসাধারণ প্রযুক্তি যা আমাদের মুল্যবান স্মৃতিগুলোকে চিরকালের জন্য ফ্রেমে বন্দী করে ফেলতে পারে! সবাই ছবি তুলতে ভালোবাসেন কিন্তু ক্যামেরা কেনার সময় অনেকেই ব্যাপক বিভ্রান্তিতে ভোগেন। বিশেষ করে আজকের জমানায় এতরকম ডিজাইন আর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অপশনের ছড়াছড়ি যে কোনটা রেখে কোনটা নেবেন, কোনটা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট, কোনটা আপনি কিনলে সহজে ব্যবহার করতে পারবেন এসব চিন্তা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আজকের প্রতিবেদনে আমরা ক্যামেরা নিয়ে আপনার মনের এইসব বিভ্রান্তিকে অনেকটাই সহজ করে দেব এবং কিভাবে আপনি আপনার জন্য সঠিক ক্যামেরাটি বাছাই করবেন সে ব্যাপারে কিছু টিপস উল্লেখ করব। এই গাইডলাইনটি আপনাকে ধারনা দিবে আপনি কেমন ধরনের ফটোগ্রাফি করতে চান আর সেই অনুযায়ী সুলভ মূল্যে বাংলাদেশের মার্কেটপ্লেস থেকে কোন ক্যামেরাটি কেনা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
‘কোন ক্যামেরাটি কিনবো?’ – প্রশ্নটি যত সহজ, উত্তর ততটাই গোলমেলে। ক্যামেরার সুইচ টেপাটাই ফটোগ্রাফি নয়, ছবি তোলার পেছনে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য রয়েছে । বাজারে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা (ডিএসএলআর ক্যামেরা, এইচডি ক্যামেরা, অ্যাকশন ক্যামেরা ইত্যাদি) ও ক্যামেরার যন্ত্রপাতি রয়েছে, যেগুলো কেনার আগে ভালোমত খোঁজখবর করে নেয়া উচিত। অতএব প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি ধরনের ফটোগ্রাফি করেন বা কোন শ্রেনীর ফটোগ্রাফার :
- নিত্যদিনের ফটোগ্রাফার
- অ্যাকশন ফটোগ্রাফার
- পেশাদারি ফটোগ্রাফার
- মজা-প্রেমী ফটোগ্রাফার
নিশ্চিন্তে এই গাইডলাইনটি পড়তে থাকুন আর জেনে নিন মার্কেটের বিভিন্ন রকম ক্যামেরার কথা আর আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ক্যামেরাটি সম্পর্কে। এর সাথে এটাও জেনে নিন যে প্রথম ডিএসএলআর কেনার আগে কি কি জানা জরুরি? বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যামেরা কিনে গরম দেখানোর চেয়ে আপনার নিজের জন্য সঠিক ক্যামেরাটি কিনতে পারাটা অনেক বেশি গর্বের! যেকোন নতুন গ্যাজেট যেমন একটা ভালোমানের ক্যামেরা কেনাটা যেমন উত্তেজনাকর তেমনই কিছুটা ভয়ও হওয়া টা স্বাভাবিক। ভয়ের কোন কারণ নেই!
নিত্যদিনের ফটোগ্রাফারদের জন্য কুশলী ক্যামেরা
নিত্যদিনের ফটোগ্রাফার আসলে কারা? আপনি যদি আপনার সন্তানদের বেড়ে ওঠার স্মৃতি ধরে রাখতে চান, অথবা সকালে উঠে একটা সেলফি তুলতে ভালোবাসেন, কিংবা ড্রেস পছন্দ করার জন্য প্রায়ই বন্ধুকে ছবি পাঠান তাহলে বুঝে নিন যে আপনি একজন নিত্যদিনের ফটোগ্রাফার! নিত্যদিনের ক্যামেরা ব্যবহারকারী তারাই যারা ক্যামেরা ব্যাপারটাকে সহজভাবে দেখেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নিত্যদিনের পণ্যের মত ব্যবহার করে থাকেন।
আমাদের স্মার্টফোন এক অসাধারণ প্রযুক্তি! স্মার্টফোন একটি বিস্ময়কর ডিভাইস যা সত্যিকার অর্থে এক অল-রাউন্ডারের কাজ করে; একনাগাড়ে টেলিফোন, গেমিং কনসোল, ক্যামেরা, রেকর্ডার, অ্যালার্ম ঘড়ি, টিভি, কম্পিউটারসহ আরো কত কি। আজকের দিনের স্মার্টফোন ক্যামেরা কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। উচ্চমূল্যের স্মার্টফোনগুলোয় ব্যতিক্রমধর্মী ক্যামেরা থাকে যেগুলো উচ্চ রেসল্যুশন, মেগাপিক্সেল, জুমিং ইত্যাদি দিয়ে সমৃদ্ধ। আপনার স্মার্টফোন এমন একটি ক্যামেরা যা আপনি সবসময় সাথে রাখতে পারবেন কোনরকম বাড়তি ঝামেলা ছাড়া আর যখন তখন ক্যামেরাবন্দী করতে পারবেন জীবনের সুন্দর সব ঘটমান মুহূর্তগুলো যা ভবিষ্যতে স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাবে চিরকাল। একটি আদর্শ ডিজিটাল ক্যামেরাকে খুব সহজে টক্কর দিতে পারে আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরাটি। তাক করুন আর দারুন সব ছবি তুলুন – এতটাই সহজ! এই ছবিগুলো আবার আপনি সামাজিক গণমাধ্যমগুলো, যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদিতে খুব সহজে শেয়ার করতে পারবেন। আবার পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা সারা দুনিয়ার যেকোন যায়গায় শেয়ার করার আগে ছবিগুলো বিশেষ কোন অ্যাপে নিয়ে এডিট করা যায়। অতএব খুব বেশি প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়াই আপনি সহজে নিত্যদিনের মুহূর্তগুলোর ছবি তুলতে পারেন।
মানসম্মত ডিজিটাল ক্যামেরা যেমন কমপ্যাক্ট ও এডভান্সড কমপ্যাক্ট ক্যামেরাগুলো এখনকার বাজারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। স্মার্টফোন ক্যামেরার তুলনায় কমপ্যাক্ট ক্যামেরার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর জুমিং। স্মার্টফোনগুলোয় ডিজিটাল জুমিং পদ্ধতিতে ছবিকেই বড় করে ফেলা হয় যার ফলে ছবির রেসল্যুশন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কমপ্যাক্ট ক্যামেরায় ব্যবহৃত হয় অপটিকাল জুমিং, এতে রেসল্যুশন নষ্ট হয় না বরং সম্পূর্ণ নিখুঁত রেসল্যুশন পাওয়া যায়। এডভান্সড ডিজিটাল ক্যামেরায় কেবলমাত্র তাক করা আর ছবি তোলা ছাড়াও আরো অনেক রকম অপশন রয়েছে যেমন- এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ, কালার, ফোকাস, জুম, লেন্স ইত্যাদি। এই ধরনের ক্যামেরায় ছোটখাট একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করার অনুভব পাওয়া যায়। অতএব আপনি সহজে আপনার পছন্দের মুহূর্তগুলো তাৎক্ষনিক তুলে ফেলতে পারবেন এবং এডভান্স ফিচারগুলো ব্যবহার করে ঘরের অল্প আলোয় বা বাইরের কড়া আলোয় সব অবস্থাতেই ছবি তুলতে পারবেন।
অতএব নিত্যদনের ফটোগ্রাফারদের জন্য স্মার্টফোন ক্যামেরা এবং কমপ্যাক্ট ক্যামেরা দু’টোই খুব ভালো অপশন। এগুলো নিজেদের বহনযোগ্য আকার, পাশাপাশি বেশ কিছু এডভান্সড ফটোগ্রাফি অপশনের জন্যও সেরা অপশন।
একশন ফটোগ্রাফারদের জন্য রোমাঞ্চকর ক্যামেরা
একশন ফটোগ্রাফারদের কোন বিশেষ ধরনের একশন দিয়ে আলাদা করা যায় না। যেসব মানুষ সবসময় সক্রিয় থাকে কিছু না কিছু নিয়ে, তারা যেকোন পরিবেশ পরিস্থিতিতে রোমাঞ্চকর বিভিন্ন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে চান। হোক সেটা ঢাকার রাস্তায় ব্যস্ত ট্রাফিকের মধ্য দিয়ে বাইক চালিয়ে যাবার ভিডিও, আইসবোর্ডে স্কীয়িং কিংবা পাহাড়-পর্বতজয়ী এডভেঞ্চারের গল্প, প্রতিটি একশন যেনো ফ্রেমে বন্দী করা চাইই!
একশন ক্যামেরার প্রধান বিশেষত্ব হলো এদেরকে ডিজাইনই করা হয় উচ্চ রেসল্যুশনে যেকোনো গতিশীল নড়াচড়া তুলতে পারার জন্য। যদিও প্রকৃতপক্ষে একশন ক্যামেরা তৈরি করা হয় বিশেষভাবে ভিডিওচিত্র ধারন করার জন্য, তবুও স্থিরচিত্র তোলার ব্যাপারেও এগুলোকে এক্সপার্ট বলা চলে। তুমুল প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা কিংবা বাইরে এডভেঞ্চারের জন্য একশন ক্যামেরার দক্ষতা সাধারণ ক্যামেরায় পাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। হাই রেসল্যুশনের ভিডিও ধারন কিংবা দীর্ঘায়ু ব্যাটারির জোর, গো-প্রো এর মত একশন ক্যামেরা সবার চেয়ে আলাদা
এই বিশেষ ক্যামেরাগুলো কঠিন পরিবেশ পরিস্থিতিতে চিত্রধারন করতে সক্ষম, এমনকি পানির নিচেও। অতএব হিমশীতল পরিবেশে স্কীয়িং হোক বা পানির নিচে স্কুবা ডাইভিং, মরুভূমির কড়া উত্তাপ কিংবা কঠোর পাহাড়-পর্বত জয় করার মুহূর্ত, এই ক্যামেরায় আপনার যেকোনো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ধারন করতে পারবেন! এগুলো এতটাই টেকসই আর মজবুত যে ১০ ফুট উচু থেকে পড়লেও এর কিছুই হবে না এবং একই সাথে এই ক্যামেরা ধূলা-ময়লা প্রতিরোধকও। তার মানে আপনি যে গো-প্রো ক্যামেরা নিয়ে কেবল ডুব সাঁতার দিতে পারবেন তাই নয়, এই ক্যামেরা কঠিন স্পোর্টস এর মাঝে পড়ে গিয়ে নষ্ট হওয়া কিংবা আঘাত পাওয়ার ঝামেলা থেকেও মুক্ত।
সুতরাং একশন ফটোগ্রাফারদের জন্য একশন ক্যামেরার কোনো বিকল্প নেই এবং এই ক্যামেরা একশনপ্রেমীদের সবরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার প্রতিটি মুহূর্তের চিত্র ধারন করে তাদের চাহিদা মেটাবে নিঃসন্দেহে।
পেশাদারী ফটোগ্রাফারদের জন্য সেরা পারফরমেন্সের ক্যামেরা
আপনি কি একজন পেশাদারি ফটোগ্রাফার? নাকি আপনি এমন কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন? যেকোন ক্ষেত্রেই আপনার একটি পেশাদারি ক্যামেরা প্রয়োজন, যা সেরা পারফরমেন্স নিশ্চিত করে। আপনি একজন প্রাকৃতিক বা বন্যপ্রানীর ফটোগ্রাফার অথবা আনুষ্ঠানিক ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন, আপনার প্রয়োজন হবে সর্বোচ্চ গুনাগুন ও আকর্ষণীয় ফিচারসমৃদ্ধ ক্যামেরার যা বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী ক্যামেরা বলা চলে।
একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা বেশ বড় আর ভারী, ব্যবহার ও সংরক্ষণের ব্যাপারে অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। সারা পৃথিবীতে সব এক্সপার্টরা সম্ভাবনাময় ফটোগ্রাফারদের এই ক্যামেরা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, একই সাথে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি গ্যাজেটও। ডিএসএলআর ক্যামেরার প্রধান আকর্ষণীয় ফিচার হলো এর বাস্তবসম্মত অটোফোকাস(এএফ) পদ্ধতি যার মাধ্যমে এই গ্যাজেটটি দ্রুতগামী বস্তুর পাশাপাশি নিখুঁত জুমিং এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঙ্খানুপুঙ্খ অংশের নির্ভুল চিত্র ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটি ডিএসএলআর প্রযুক্তিগত ও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বাজারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সেরা।
ডিএসএলআরের দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল ব্যাটারি আপনাকে প্রতি চার্জে হাজারের বেশি ছবি তোলার স্বাধীনতা দেয়। একই ক্যামেরায় যেমন সব ফোকাল দৈর্ঘের ও প্রায় সব কোম্পানির লেন্স ব্যবহার করা যায়, তেমনি একই লেন্স প্রায় যেকোন ব্র্যান্ডের ক্যামেরার সাথে ব্যবহার করা যায়। এই পরিবর্তনশীল লেন্সের সুবিধা আপনাকে ফটোগ্রাফির উপর পুরোপুরিভাবে ম্যানুয়াল নিয়ন্ত্রণ দেয় এবং যেকোন ধরনের ফটোগ্রাফি করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। ডিএসএলআর ক্যামেরাগুলো টেকসই এবং এর মজবুত গড়নের সাথে সেরা গুনাগুন উপহার দেয় উচ্চ রেসল্যুশনের ফলাফল পাবার জন্য। হ্যাঁ, ডিএসএলআর ক্যামেরা অনেক ব্যয়বহুল, কিন্তু এর পারফরমেন্স নিশ্চিতভাবে এর দামকে পুষিয়ে দিবে।
অতএব উঠতি সম্ভাবনাময় ও পেশাদারী ফটোগ্রাফাররা, আকারের পাশাপাশি পারফরমেন্সে বড় ক্যামেরা কিনতে চাইলে আপনাদের পকেটের একটু গভীরে গিয়েই খরচ করতে হবে।
ডিএসএলআর কেনার আগে এখানে থেকে দেখে নিন কীভাবে আপনার প্রথম ডিএসএলআর (DSLR) ক্যামেরা কিনবেন?
Leave a Comment